- আমিনুল হক
ঢাকা : বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের সম্পর্কযুক্ত সংবাদ পরিবেশনে যত্নবান হতে হবে।
বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ
সংবাদ মাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের সম্পর্কযুক্ত সংবাদ
পরিবেশনের ক্ষেত্রে যত্নবান থাকতে হবে। যাতে করে দু’দেশের সম্পর্কে অহেতুক বিরূপ প্রভাব
না ফেলে। মঙ্গলবার ঢাকায় ইন্ডিয়ান মিডিয়া করেসপন্ডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ-
ইমক্যাব আয়োজিত বঙ্গবন্ধু: বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন,
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি করোনা টিকা নিয়েও কিছু ভুল, অসত্য সংবাদ আমাদের দেশে
এবং ভারতেরও কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশিত হয়েছে। যা দু’দেশের মানুষের মধ্যে
বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে অবশ্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাংবাদিক বৈঠক করে তা
নিরসন করতে হয়েছে। ইমক্যাব সভাপতি বাসুদেব ধরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী,
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল
আহসান বুলবুল ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ। সেমিনারে মুল প্রবন্ধ
উপস্থাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সাংবাদিক হারুন হাবীব এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ।মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার বক্তৃতায়
গভীর কৃতজ্ঞতাভরে মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, আমাদের
মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত শুধু আমাদের সহায়তাই করেনি, আমাদের মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে
ভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধ করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনীর
সদস্যদের রক্তও মিশে আছে এবং বাংলাদেশের এক কোটি মানুষকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল।
পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে অনেক পরিবার তাদের ঘরের একটি বা দু’টি কক্ষ শরণার্থীদের জন্য
ছেড়ে দিয়েছিল।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিচার
বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ভারতের মানুষের এই অবদান, ভারতের অবদান, ভারতের
সেনাবাহিনীর আত্মদান বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বঙ্গবন্ধু এবং
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু কারাগারে অন্তরীণ
ছিলেন। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শুধুমাত্র বাংলাদেশকে মুক্ত করার
জন্য নয়, বঙ্গবন্ধুর ফাঁসির আদেশ হবার পর বঙ্গবন্ধুকে যাতে ফাঁসি দেয়া না হয়, সেজন্য ৩০টি
দেশ সফর করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করেছিল। এ
অবদান কখনো ভোলার নয়।বঙ্গবন্ধুর দুরদর্শিতার প্রমাণ মেলে ’৭৪ মৈত্রী চুক্তিতে। সেদিন
চুক্তি করা না হলে, ছিটমহলগুলো আমাদের অধিকারে আনা সম্ভব হয়েছে। আজকে ভারত-
বাংলাদেশ সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে
আরও গভীরে প্রোথিত হয়েছে। আমাদের দু’দেশের মধ্যে যে আন্তঃসংযোগ সেটি ক্রমাগতভাবে
বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি মনে করি এটি এখনও যথেষ্ট নয়। আমাদের দু’দেশের মানুষের মধ্যে যে
আন্তঃসংযোগ, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়ানো
উচিৎ। এটিকে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে যে পর্যায়ে ছিল আমাদেরকে ধীরে
ধীরে সেই পর্যায়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। তাহলে দু’দেশের মানুষ
উপকৃত হবে, দুই দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশ্বে প্রতিবেশি
সম্পর্কের দিক দিয়ে একটা উদাহরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করে ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম
কুমার দোরাইস্বামী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময় থেকেই দু’দেশের সম্পর্কের ভিত্তি গঠে উঠেছে।
দু’দেশের ক্ষেত্রে যা করতে হবে তা বঙ্গবন্ধু আগেই দেখিয়ে গেছেন, আমাদের নতুন করে কোন
গাইডলাইনের দরকার নেই। দু’দেশের আশা আকাঙ্খা এক, কোন পার্থক্য নেই। জনগণ পর্যায়ে
সম্পর্ক বাড়াতে আমাদের নজর দিতে হবে। তাহলেই সম্পর্ক টেকসই হবে।এসময়
হাইকমিশনার আরও বলেন, যা আমাদের জন্য ভাল তা আপনাদের জন্য ভাল। আবার যা
আপনাদের জন্য ভাল তা আমাদের জন্য ভাল। এই নীতিতে এগিয়ে যেতে হবে, সন্দেহের কোন
জায়গা নেই, আমাদের অনেক পথ যেতে হবে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা
রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেন দোরাইস্বামী।
Be First to Comment